ট্রেডমার্ক নিবন্ধন (Trademark Registration) করার নিয়ম কি?

ট্রেডমার্ক (Trademark) হচ্ছে এমন এক ধরনের স্বতন্ত্র চিহ্ন, লেখা বা প্রতীক যা কোন ব্যবসায়িক পণ্যের উৎপাদক, উৎপাদন প্রক্রিয়া, গুনগত মান ইত্যাদি সম্পর্কে সহজেই ধারনা প্রদান করে। এর সহজ বাংলা হচ্ছে “বাণিজ্যিক মার্কা”। এই ট্রেডমার্ককে অনেকে আবার ব্রান্ড (Brand) নামেও অভিহিত করে থাকেন তবে আইনের দৃষ্টিতে ট্রেডমার্ক নামটি-ই প্রয়োগ করতে হবে।

ট্রেডমার্ক হচ্ছে একধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ, অথ্যাৎ এটি এমন একটি সম্পদ যা আপনি আপনার বুদ্ধি, শ্রম ও সময় দিয়ে প্রতিষ্টিত করেছেন, যা ধরা যায়না, ছোয়া যায় না কিন্তু এই সম্পদের ফল ভোগ করা যায়।

আমাদের দেশে ট্রেডমার্ক নিবন্ধন দিয়ে থাকে শিল্প মন্ত্রণালয়। দেশে প্রচলিত ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ এবং আন্তর্জাতিক চুক্তির বিশেষ কিছু নিয়ম অনুসরণ করে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্ক অধিদপ্তরের যে কেউ ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারেন। প্রাথমিকভাবে আবেদন থেকে নিবন্ধন পর্যন্ত ধাপ চারটি। আর সরকারি ফি পরিশোধ করতে হয় তিনটি ধাপে। আবেদন প্রক্রিয়া ও ফি পরিশোধের চার্ট নিম্নরূপ

ট্রেডমার্ক নিবন্ধন পদ্ধতি ও খরচ

ধাপ-১: ট্রেডমার্ক আবেদন দাখিল

কি কি কাগজ-পত্র লাগবে?

(১) মার্ক/লোগো/ডিভাইসের নাম, প্রতিরূপ অথবা বিবরণ
(২) আবেদনকারীর নাম আবেদনকারীর ঠিকানা ও জাতীয়তা
(৩) পণ্য/সেবার সবিস্তার বিবরণী ও ধরণ
(৪) অফিস ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, এবং ই-মেইল
(৫) ট্রেড লাইসেন্স / Incorporation Certificate

১। সরকারি ফি: ৫০০০/-
২। ভ্যাট: ৭৫০/-
৩। আমাদের ফি: ৪২৫০/-
সর্বোমোটঃ ১০০০০/- টাকা লাগবে

ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণীভুক্ত পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা আবেদন করতে হবে । কোন ধরণের পণ্য বা সেবা কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত তা আগেই জেনে নেওয়া প্রয়োজন।

ধাপ-২: আবেদন পরীক্ষা

এই ধাপটি শুরু হয় আবেদন তথা ১ম দাপ থেকে ৬-১৮ মাস পরে। ট্রেডমার্কের এই ধাপটি অনেকটা নামজারি কেইসের মতো। অর্থাৎ জমির মালিকানার মতোই এই ধাপে ট্রেডমার্কের মালিকানা যাচাই করা হয়, আমাদের দেশে প্রচলিত ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ এর ধারা ৬,৮ ও ১০ অনুসারে আবেদনটি পরীক্ষা করা হয়। যদি আপনার আগে কেউ একই বা দেখতে একই ট্রেডমার্কের জন্য আবেদন করে থাকে বা অন্য কারোর নামে নিবন্ধন থাকে তাহলে আপনার মার্কটি নিবন্ধন হবে না।

আবার যদি এমন হয় আপনার মার্কটি প্রচলিত সুপরিচিত ট্রেডমার্কের নকল তাহলেও আপনার মার্ক নিবন্ধন হবে না। এই ক্ষেত্রে নামজারি কেইসের মতো ট্রেডমার্ক অফিস আপনাকে ২ মাসের মধ্যে জবাব দাখিলের সময় দিয়ে নিজের মার্কের মালিকানা সংক্রান্ত প্রমাণাদি দাখিলের জন্য নোটিশ দিবে । ব্যর্থ হলে আপনার আবেদন পরিত্যক্ত বলে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে Objection এর ধরণ অনুসারে (প্রায় ৫০,০০০/- থেকে ১,০০,০০০/-) এই ধাপে খরচ হতে পারে । তবে যদি একবার পরিত্যক্ত হয়ে যায় তাহলে পুনর্বহালের জন্য সরকারি ফিসহ অতিরিক্ত আরও ১৫০০০/- খরচ হবে। আর যদি কোন প্রকার নোটিশ ইস্যু না হয় তাহলে এই ধাপে ১ টাকাও খরচ নেই। নোটিশ ইস্যু না হলে আপনার মার্কটি পরবর্তী দাপে তথা গেজেটে প্রকাশের অনুমতি লাভ করবে।

বি:দ্র: ৯৮% ক্ষেত্রে কোনো টাকার প্রয়োজন হয়না।

ধাপ-৩: জার্নাল বা গেজেট বিজ্ঞপ্তি

যদি ট্রেডমার্ক অফিস কোন নোটিশ ইস্যু না করে অথবা যদি ইস্যু করে এবং আপনি উক্ত নোটিশের বিষয়ে যথাযথ তথ্য ও প্রমাণ দাখিল করতে পেরেছেন এবং এসব তথ্য ও প্রমাণের বিষয়ে ট্রেডমার্ক অফিস সন্তুষ্ট হলে আপনার মার্কটি গেজটে প্রকাশের অনুমতি পত্র লাভ করবে এবং গেজেট বা জার্নাল ফি জমা দিলে ৫ থেকে ৬ মাসের গেজেটে আপনার মার্কটি প্রকাশিত হবে। আবেদনকারীর মার্কটি জার্নালে প্রকাশ করার অর্থ হচ্ছে যদি দেশ-বিদেশের কোন ব্যক্তি বর্ণিত মার্কের বিষয়ে ক্ষুব্ধ বা সাংঘর্ষিক মনে করেন তাহলে আপত্তিকারী যেন আবেদনকারীর মার্কটির নিবন্ধনের বিরোধিতার সুযোগ পায়।

আবেদনকারীর মার্কটি ট্রেডমার্ক জার্নালে প্রকাশে ২ মাসের সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি (বিশ্বের যে কোন প্রান্ত থেকে) নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিরোধিতার আবেদন (অপোজিশন কেস) দাখিল করতে পারবেন। মামলার ফলাফল নিবন্ধন আবেদনকারীর বিপক্ষে গেলে নিবন্ধনের আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা হবে এবং ফলাফল নিবন্ধন আবেদনকারীর পক্ষে হলে নিবন্ধন প্রদানের লক্ষ্যে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

১। সরকারি ফি: ৩০০০/-
২। ভ্যাট: ৪৫০/-
৩। আমাদের ফি: ১১৫৫০/-
সর্বোমোটঃ ১৫০০০/- টাকা লাগবে

ধাপ-৪: নিবন্ধন

জার্নাল প্রকাশের পর যদি কোন বিরোধিতার আবেদন না হয় অথবা বিরোধিতার মামলাটির ফলাফল নিবন্ধনের পক্ষে হয় তাহলে বর্ণিত মার্কটি ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রি-ভুক্ত হবে এবং আবেদনকারী এইমর্মে একটি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট লাভ করবেন। রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ আবেদনের তারিখ হতে ৭ বছর এবং পরবর্তী প্রতি ১০ বছর অন্তর অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত (এমনকি উত্তরাধিকার সূত্রে) উহা নবায়ন করা যাইবে।

১। সরকারি ফি: ২০০০০/-
২। ভ্যাট: ৩০০০/-
৩। আমাদের ফি: ১৭০০০/-
সর্বোমোটঃ ৪০০০০/- টাকা লাগবে

প্রশ্ন উত্তর

ট্রেডমার্ক কি?

ট্রেডমার্ক হচ্ছে একটি মূল্যবান সম্পদ যা উত্তরাধিকার সূত্রে ভোগ এবং দখলে রাখা যায়।

আইনের দিক থেকে ট্রেডমার্ক হচ্ছে কোন নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবাকে চিহ্নিত করা যায় এমন একটি স্বতন্ত্র চিহ্ন, ছবি, শব্দ, বর্ণ বা বর্ণের সমষ্টি যা উক্ত পণ্য বা সেবাটিকে সমজাতীয় অন্যান্য সকল পণ্য বা সেবা থেকে আলাদা করে। যেমন LUX এবং DOVE সাবান জাতীয় পণ্য হলেও ভিন্ন ভিন্ন ট্রেডমার্ক থাকার কারণে পণ্য দুইটি ক্রেতাগণ আলাদা করতে সক্ষম হন। আবার iPhone বা Nokia আলাদা আলাদা ব্র্যান্ড বা ট্রেডমার্ক নির্দেশ করলেও উভয়ে সমজাতীয় পণ্য।

ট্রেডমার্কের অপর নাম ব্র্যান্ড। আপনি ব্র্যান্ড, ব্র্যান্ড নেম, ব্র্যান্ড ইমেজ, ব্র্যান্ডিং বা ব্র্যান্ড ভ্যালু শব্দ সমূহের সাথে পরিচিত। মূলত একটি পণ্য বা সেবার ব্র্যান্ড নেম হচ্ছে উহার ট্রেডমার্ক।

হিসাব বিজ্ঞানের ভাষায় ট্রেডমার্ক একটি অদৃশ্য সম্পদ যা কোন কোন ক্ষেত্রে দৃশ্যমান সম্পদ থেকেও অনেক মূল্যবান, যেমন এ্যাপলের ট্রেডমার্ক/ব্র্যান্ড ভ্যালু মোট সম্পদ মূল্যের ১৫% বা ১৪৬.৩ বিলিয়ন ডলার। একইভাবে সামস্যাং ট্রেডমার্ক/ব্র্যান্ড ভ্যালু মোট সম্পদের ২৮% বা ৯২.৩ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে আধুনিক আইনে ট্রেডমার্ক হচ্ছে একটি বুদ্ধি-ভিত্তিক সম্পদ যা আইনদ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও সুরক্ষিত। বিশ্বের প্রতিটি দেশ রাষ্ট্রীয় ভাবে আইনের মাধ্যমে ট্রেডমার্ক নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা দিয়ে থাকে।

ট্রেডমার্ক বলতে কী বুঝায়?

ট্রেডমার্ক হচ্ছে উৎপাদনকারী কর্তৃক তার উৎপাদিত পণ্য বা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাদের বিক্রিতব্য পণ্যের ওপর দেওয়া একটা চিহ্ন যা দেখে ভোক্তাসাধারণ সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী বা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সুনাম বা বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে তাদের ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হলে সেই চিহ্ন দেখে পণ্যের অর্ডার দেওয়া বা ক্রয় করে। উৎপাদনকারী বা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর নেওয়ার পরিবর্তে সেই চিহ্নের সাথে পরিচিত হওয়াটাই বেশি প্রচলিত ও বেশি সুবিধাজনক। একই জাতীয় পণ্যের উৎপাদনকারী বা বিক্রেতা অনেক ট্রেডমার্ক স্বতন্ত্র হওয়ায় এ ট্রেডমার্ক দেখেই ক্রেতা সাধারণ তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্য সংগ্রহ করে থাকে। ফলে ট্রেডমার্কের সাথে উৎপাদনকারী বা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ট্রেডমার্কের সুনাম প্রতিষ্ঠিত হলে সংশ্লিষ্ট উৎপাদনকারী বা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক সাফল্য নিয়ে আসে। কাজেই ট্রেডমার্কে একটা স্বার্থ বা অধিকার অর্জিত হয় যা আইন দ্বারা রক্ষা করা প্রয়োজন। প্রাচীনকাল থেকেই সকল দেশে ট্রেডমার্কের ব্যবহার হয়ে আসছে এবং কমল ল’ দ্বারা সেগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। পরবর্তীকালে বিধিবদ্ধ আইন প্রণয়ন করে এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অনিবন্ধিত ট্রেডমার্ক কমন ল’ দ্বারা এবং নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা এগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ২০০৯ সালের ট্রেডমার্ক আইন বলবৎ আছে এবং এর পূর্বে ১৯৪০ সালের ট্রেডমার্ক আইন প্রচলিত ছিল।

 

কমন ল’ অনুসারে ট্রেডমার্ক হচ্ছে একটি শব্দ, কৌশল বা লেবেলের আকাশে দৃশ্যমান কোন প্রতীক যা ব্যবসায়িক পণ্যের ওপর লাগানো হয় এ উদ্দেশ্যে যে, ক্রয়েচ্ছু জনগণকে বুঝানো যে ঐ পণ্য চিহ্ন প্রদানকারী বিশেষ ব্যক্তি কর্তৃক উৎপাদিত বা বিক্রীত যা অনুরূপ পণ্য অন্যান্য উৎপাদনকারী যা বিক্রেতা হতে স্বতন্ত্র। [A trade mark is a visual symbol in the from of a word, a device or a label applied to articles of commerce with a view to indicate to the purchasing public that they are the goods manufactured or otherwise dealt is by a particular or person as distinguished from similar goods manufactured or dealt in by other persons]

 

বাংলাদেশের ‘ট্রেডমার্ক’ আইন ২০০৯ এর ২ (২৩) ধারায় বলা হয়েছে যে, মার্ক হচ্ছে কোন ডিভাইস, ব্রান্ড, শিরোনাম, লেবেল, টিকেট, নাম, স্বাক্ষর, শব্দ, অক্ষর, প্রতীক, সংখ্যা, রং বা এগুলোর যেকোনো সমন্বয়, ২ (৮) ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘ট্রেডমার্ক অর্থ কোন নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক অথবা কোন পণ্যের সহিত ব্যবহৃত এমন কোন মার্ক যাতে ব্যবসায়িক উক্ত পণ্যের ওপর মার্ক ব্যবহারকারী স্বত্বাধিকারীর অধিকার রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়; কোন সেবার সহিত ব্যবহৃত এমন কোন মার্ক যাতে ব্যবসায়িক উক্ত সেবার ওপর মার্ক ব্যবহারকারীর স্বত্বাধিকারীর অধিকার রয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। সেবার সহিত ব্যবহৃত মার্ককে সার্ভিস মার্ক বলে। যেমন- হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বিমান, লঞ্চ, ভাড়ায় চালিত কার, এজেন্সি ইত্যাদি।

ট্রেডমার্ক প্রতীক এর অর্থ কি ?

ট্রেডমার্কের ধরন বোঝানোর জন্য কিছু প্রতীক ব্যবহৃত হয়। সেসব প্রতীকের বিশেষ অর্থ রয়েছে। সাধারনত R, TM, SM এই তিনটি প্রতীক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিম্নে প্রতীকগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো

১)™ প্রতীক : ইংরেজি বর্ন “T” এবং “M” এর সমন্বয়ে (Trade Mark) যে প্রতীকটি ব্যবহৃত হয় সেটি হলো অনিবন্ধিত পণ্যের লোগোতে ব্যবহৃত প্রতীকটি। এই প্রতীকটি নিবন্ধিত পণ্যের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যায়। এটি সাধারণত ক্রেতার কাছে পণ্যের ব্র্যান্ডিং এর ক্ষেত্রে খুব কাজে লাগে।

২) R প্রতীক : ইংরেজী বর্ণ “R” কে গোল চিহ্নের ভিতরে রেখে ট্রেডমার্ক বা লোগোর পাশে কিংবা কোণায় এটি বসানো হয়। এটি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ট্রেডমার্কটি যথাযথ রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা অনুমোদিত ও নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক।

৩) ‍‌℠ প্রতীক : Service Mark বা “SM” প্রতীকটি পণ্যের মতো অনিবন্ধিত সেবার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ অনিবন্ধিত পণ্যের ক্ষেত্রে যেমন ™ প্রতীক ব্যবহৃত হয় তেমনি অনিবন্ধিত সেবার ক্ষেত্রে ℠ প্রতীক ব্যবহৃত হয়। সেবা বলতে হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ, বিমান, হাসপাতাল পরিসেবা ইত্যাদিকে বোঝানো হয়। তবে এসব প্রতিক ব্যবহার করার পূর্বে ভালো ভাবে যেনে নিতে হবে।

ট্রেডমার্ক লঙ্ঘনের প্রতিকার কি?

যদি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত স্বত্বাধিকারী বা ব্যবহারকারী না হওয়া সত্ত্বেও অন্য কোন নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের সহিত সাদৃশ্যপূর্ণ বা সাদৃশ্যমূলক কোন ট্রেডমার্ক প্রতারণামূলকভাবে অথবা স্বতন্ত্রভাবে নিজ পণ্যে বা সেবায় ব্যবহার করে তখন তা লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হবে। বাংলাদেশে প্রচলিত ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ এবং দণ্ডবিধি, ১৮৬০ অধীন এরূপ লঙ্ঘনের দায়ে দেওয়ানী এবং ফৌজদারি প্রতিকারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, অ-নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের প্রতিকার আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে খুবই সীমিত।

ফৌজদারি অপরাধ ও প্রতিকার:
মিথ্যা ট্রেডমার্ক বা ট্রেড বর্ণনা ব্যবহার, ট্রেডমার্ক জাল করা ও ট্রেডমার্ক জাল করার যন্ত্র দখলে রাখা ইত্যাদির বিষয়ে দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪৮২, ৪৮৩ এবং ৪৮৫ ধারার অপরাধ যার শাস্তি হলো সর্বোচ্চ দুই বছর এবং সর্বনিম্ন ছয় মাসের কারাদণ্ড সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ দুই লক্ষ এবং সর্বনিম্ন পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড।

ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ এর ৭৩ ধারা অনুসারে যদি কোন ব্যক্তি কোন ট্রেডমার্ককে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেন, কোন পণ্য বা সেবার ক্ষেত্রে ট্রেডমার্ক মিথ্যাভাবে ব্যবহার করেন অথবা করিবার উদ্দেশ্যে কোন যন্ত্র দখলে রাখেন অথবা মিথ্যা পরিচয় বহন করেন তা হইলে শাস্তি হলো সর্বোচ্চ দুই বছর এবং সর্বনিম্ন ছয় মাসের কারাদণ্ড সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ দুই লক্ষ এবং সর্বনিম্ন পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ সংঘটিত হইলে সর্বোচ্চ তিন বছর এবং সর্বনিম্ন এক বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ তিন লক্ষ টাকা এবং সর্বনিম্ন পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ডেরও বিধান রয়েছে।

দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৪৮৬ ও ৪৮৭ ধারা এবং ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯-এর ৭৪ ধারা অনুসারে মিথ্যা মার্ক বা বর্ণনা যুক্ত পণ্য বিক্রি করা, এক ধরনের পণ্যের মোড়কে অন্য ধরনের পণ্য প্যাকেট করা দণ্ডনীয় অপরাধ। অপরাধ একই হলেও শাস্তির ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। ট্রেডমার্ক আইনে প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছর এবং সর্বনিম্ন ৬ মাসের কারাদণ্ড সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ ২ লক্ষ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে কিন্তু দণ্ডবিধিতে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ এর অপর ফৌজদারি প্রকৃতির অপরাধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ৭৬,৭৭ এবং ৭৮ এর অধীনে সংঘটিত অপরাধ। এইসব ধারার অপরাধ, যেমন অ-নিবন্ধিত ট্রেডমার্ককে নিবন্ধিত বলে প্রচার করা, নিবন্ধন বইতে মিথ্যা তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা বা করার চেষ্টা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিবন্ধক বা তার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট অপরাধ আমলে নিতে পারবেন।

দেওয়ানী প্রতিকার:
ট্রেডমার্ক আইন ২০০৯ এর ৯৬ ধারার অধীনে কোন নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের লঙ্ঘন, নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক সংশ্লিষ্ট কোন অধিকার, নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের সংশোধিত কোন অধিকার, এবং সাদৃশ্যপূর্ণ বা প্রতারণামূলকভাবে সাদৃশ্যপূর্ণ কোন ট্রেডমার্ক নিবন্ধিত হউক বা না হউক চালাইয়া দেয়া হইলে যে কেউই জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন। এই ধারায় নিবন্ধিত এবং অ-নিবন্ধিত ট্রেডমার্ক লঙ্ঘনের প্রতিকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মামলা দায়েরের পদ্ধতি:
ফৌজদারি অপরাধে ক্ষেত্রে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট অথবা ও প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে। কিন্তু ট্রেডমার্ক আইনের ৯৬ ধারার বিধানের ক্ষেত্রে এবং নিষেধাজ্ঞা, ঘোষণামূলক প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই জেলা জজ আদালতে মামলা করতে হবে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে যেমন, নিবন্ধন বহি (রেজিস্ট্রি বই সংশোধনের) বা নিবন্ধন বাতিলের জন্য হাইকোর্ট বিভাগে আবেদন করতে হবে।

কিন্তু প্রচলিত প্রথা অনুসারে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিস প্রদান করাও যায়, এক্ষেত্রে মামলা দায়েরের পূর্বেই প্রতিকার (লঙ্ঘন বন্ধ) পাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। তবে মামলা দায়েরের পূর্বে গোপন অনুসন্ধান করে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা জরুরী। আমাদের দেশে এইরূপ অনুসন্ধানের জন্য ২/১ অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

মামলা দায়েরের সময়সীমা:
ট্রেডমার্ক আইনের ৮৬ ধারার বিধান অনুসারে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার ৩ বছর অথবা বাদী কর্তৃক তথ্য উদঘাটিত হইবার অনধিক দুই বছরের মধ্যে (যা আগে ঘটে) মামলা দায়ের করতে হবে। দণ্ডবিধির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান প্রযোজ্য।

আপিলের বিধান:
ট্রেডমার্ক আইন, ২০০৯ অধীন অধীনে নিবন্ধক (রেজিস্টার) এবং জেলা জজ আদালত কর্তৃক প্রদত্ত যে কোনও আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে হবে হাইকোর্ট বিভাগে। আপিলের সময় দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮-এর বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে। অপরদিকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রদত্ত কোনও আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর সকল বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে।

যেসব মার্ক নিবন্ধন করা যাবে না
ট্রেডমার্ক আইনের ধারা ৬ এবং ৮ অনুসারে কুৎসামূলক বা দৃষ্টিকটু মার্ক; বিদ্যমান কোনো আইনের পরিপন্থী মার্ক, প্রতারণামূলক বা বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী মার্ক, সাদৃশ্যপূণ মার্ক, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সৃষ্টি করতে পারে এমন মার্ক; কোন দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা বা অফিসের নাম, মনোগ্রাম, মানচিত্র, পতাকা, জাতীয় প্রতীকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো মার্ক, রাসায়নিক পণ্য প্রভৃতি মার্কের জন্য আবেদন করা যায় কিন্তু নিবন্ধন করা যায়। এক্সিমন ধাপে এসে এসব আবেদন বাতিল হয়ে যায়।
ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের মেয়াদ কাল কত দিন?
যদি ট্রেডমার্ক আবেদনটি প্রতিটি ধাপ পার হয়ে নিবন্ধন সনদ প্রাপ্ত হয় তাহলে এর মেয়াদ আবেদনের তারিখ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তারপর আপনাকে প্রতি ১০ বছরের জন্য নবায়ন করতে হবে। জমির ন্যয় আপানর উত্তরাধীকারগণ ট্রেডমার্কের মালিক হবেন এবং নবায়ন করে মার্কটি আজীবন ব্যবহার করতে পারবেন।
নিবন্ধিত ট্রেডমার্কের সুবিধা কি?
যেকোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান তার পণ্য বা সেবা ট্রেডমার্ক (™) বা সার্ভিসমার্ক (SM) রেজিষ্ট্রেশন এর মাধ্যমে আইনগত সুবিধা পায়। ফলে অন্য কেউ তাদের মার্ক নকল করে অনৈতিক ভাবে সুবিধা পাবেন না। এতে সাধারণ ক্রেতা বা ভোক্তা ও প্রতারিত হবেন না।
অনিবন্ধিত ট্রেডমার্কের ৫ টি অসুবিধা কি কি?

১। ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করা না হলে আদালতে ট্রেডমার্ক লংঘনের প্রতিকার পাওয়া যাবে না।
২। ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করা না হলে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ব্যবসায়িক সুনাম ব্যহত হয়।
৩। ট্রেডমার্ক নিবন্ধন করা না হলে মালিক তার নিরংকুশ ব্যবহারের অধিকার লাভ করতে পারে না।
৪। অনিবন্ধিত ট্রেডমার্কের স্বত্ত্বধিকারীরাও ট্রেডমার্ক লংঘনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।
৫। অনিবন্ধিত স্বত্বাধিকারীরা সাধারণত নিবন্ধিত স্বত্বাধিকারীদের চেয়ে কম আইনি সহায়তা পেয়ে থাকেন

ট্রেডমার্ক ক্লাস কি?
  • ট্রেডমার্ক নাইস শ্রেণীবিন্যাস যা পণ্য ও পরিষেবার আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন হিসাবে পরিচিত হয় অনুযায়ী 45 বিভিন্ন ক্লাসের পৃথকীকৃত করা হয়। ঐ 45 শ্রেণীর মধ্যে 34 শ্রেণীর সামগ্রী ধারার অধীন আসা এবং 11 শ্রেণীর সার্ভিস ধারার অধীন আসা। প্রতিটি বর্গ পণ্য ও পরিষেবার কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণীর দেখায়। যদিও ট্রেডমার্ক নিবন্ধনের জন্য আবেদন, এটা ঠিক বর্গ চয়ন করা প্রয়োজন। যখন আপনার পণ্য বা সেবার যথাযথ বর্গ নির্বাচন ট্রেডমার্ক অনুসন্ধান সম্পন্ন করা হয়। এই শ্রেণীবিভাগ প্রায় 80,000 পণ্য হয়।