এখনকার সময়ে আমরা বেশিরভাগ কাজই অনলাইনে করে থাকি যার মধ্যে শপিং অন্যতম। এখন আপনি যাই সেল করতে চান আপনাকে ই-কমার্স ওয়েবসাইট সাইটের কথা চিন্তা করতে হবে। একটি ই-কমার্স ওয়েবসাইট সাইট আপনাকে আপনার ব্র্যান্ড গড়ে তুলতে সহায়তা করবে এবং আরো অনেক বেশি কাস্টোমারের সাথে কানেক্ট করতে সহায়তা করবে, যার ফলে আপনার সেল বাড়বে কিন্তু এটা তখনই হবে, যখন আপনি ঠিক মত একটি ওয়েবসাইট ডিজাইন করতে পারবেন। ই-কমার্স ওয়েব ডিজাইন খুব সহজ ব্যাপার না, একটি ভালো ই-কমার্স ডিজাইন মানে সঠিক রঙ ব্যবহার করা, ঠিক মত ফন্ট ব্যবহার করা, ছবি ব্যাবহার করা। শব্দ এবং ডিজাইন কাস্টোমারকে প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস কিনতে আগ্রহি করে তুলবে। তবে শুধু দেখতে ভালো এবং বড় ব্রান্ডের মত ফিল পেলেই হবে না এখানে কাস্টোমারকে আসতে হবে এবং কেনার জন্য একশন নিতে হবে তাহলেই আপনার সেল আসবে। কিন্তু সেটা আপনি আসলে কিভাবে করবেন?
এখানে কিছু টিপস দেয়া হলো যা কিনা আপনাকে হেল্প করবে আপনার শপকে এক ধাপ উপরে নিতে
১. Keep it simple
প্রধান সব নিয়মের মধ্যে একটা নিয়ম হচ্ছে আপনি যখন ডিজাইন করবেন অথবা করাবেন তখন “KISS”- Keep IT Simple, Silly! ei ব্যাপারটা মাইন্ডে রাখবেন।
যখন আপনি কোন ই কমার্স সাইট ডিজাইন করবেন তখন সিম্পল ডিজাইন হবে সব সময়ের জন্য ভালো একটা ডিসিশন। আপনি যত ইলিমেন্টস যোগ করবেন আপনার পেজে যেমন রঙ, ব্যানার অ্যাডস, বিভিন্ন ধরনের পপ আপস ইত্যাদি তত আপনার কাস্টমার আপনার থেকে দূরে চলে যাবে, বন্ধ হয়ে যাবে সেল। আপনার দরকার নেই এতোকিছু রাখার আপনার ই কমার্স ওয়েবসাইটে, এগুলা শুধু মাত্র আপনার কাস্টোমারের দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে যাবে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিরক্তি তৈরি করবে যা কিনা সেল জেনারেট হবার ক্ষেত্রে এবং ব্র্যন্ডিং গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভালো কিছু না। আপনার ডিজাইন ক্লিয়ার, ক্লিন এবং সিম্পল রাখেন এবং সেলের প্রতি ফোকাস করেন।
২. ব্র্যান্ডিং এর ব্যাপারকে প্রায়োরিটি দেন
যখন অনলাইন থেকে কিছু কেনার ব্যপার আসে মানুষ চেস্টা করে প্রতিষ্ঠিত কোন ব্র্যান্ডে থেকে প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস নেয়ার জন্য। এরকম সাইট থেকে না যেটার কোন ভ্যালু নেই এবং যেটা দেখলেই কাস্টোমারের মনে প্রথমেই সন্দেহ দেখা দেয় যে এখান থেকে আমার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি হতে পারে।
আপনি যদি বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে চান তাহলে তাহলে আপনাকে অনেক সেল আনতে হবে আপনার সাইট থেকে, ব্র্যান্ড গড়ে তোলার ব্যাপারে সিরিয়াস চিন্তাভাবনা করতে হবে। ই কমার্স বিজনেসের DNA বলা হয় ব্র্যান্ডিং কে, যেখানে কোম্পানি হিসেবে আপনি কে, আপনি কি করতে এসেছেন এবং কেন আপনি অন্যদের থেকে আলাদা। যেটা চমৎকার একটা ভুমিকা রাখে আপনার কাস্টোমারকে আগ্রহি করে তুলতে এবং সেলস বাড়াতে। তাই ডিজাইন করার আগে সময় নিয়ে আপনার ব্র্যান্ড ডিফাইন করুন এরপর আপনার ব্র্যান্ডকে সাইট ডিজাইনে ব্যবহার করুন।
কিন্তু এখানে যদি আপনি নিশ্চিত না থাকেন আপনার ব্র্যান্ড কেমন হবে কোন সমস্যা নেই, নিজেকে এই প্রশ্নগুলো করুন, যদি আমার ব্র্যান্ড হয় একজন মানুষ তাহলে সে কে হতে পারে। যদি আমি আমার বিজনেসকে ৩টা শব্দ দিয়ে বর্ণনা করতে চাই তাহলে সেটা কি হবে? অন্যদের থেকে আমার ব্র্যান্ড কোন দিক থেকে আলাদা, আমরা অন্যদের থেকে কোন কোন ব্যাপারগুলো আরো ভালোভাবে করতে চাচ্ছি। যখন আপনি জানবেন আপনি কে তখন আপনি আপনার সাইটে ব্রান্ডিং এর জন্য কাজ করতে পারবেন আর এই ব্রান্ডিং কাস্টমারেরম বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করবে এবং ধীরে ধীরে সেলস জেনারেট করতে থাকবে।
৩. নিজেকে আপনার নিজের ওয়েব সাইটের ভিজিটর হিসেবে চিন্তা করেন
আপনি যদি আপনার ই কমার্স সাইটের ডিজাইনের সাথে আপনার কাস্টোমারকে কানেক্ট করতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমে অডিয়েন্স হিসেবে চিন্তা করতে হবে। আপনার কাস্টোমার খুব অল্প কিছুই চায় আপনার ই কমার্স সাইটে যেমন, এরকম একটা সাইট যেটাকে খুব সহজে বুঝে যায়, প্রোডাক্ট সার্চ থেকে শুরু করে প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস সেল করার আগ পর্যন্ত, সুন্দর একটা ডিজাইন, এবং শপিং প্রসেস যতটা সহজ হয় এবং ঝামেলামুক্ত হয়। আর আপনি যদি এগুলো ঠিক মত করতে পারেন তাহলে আপনি এটার গুরুত্ব এক সময় বুঝতে পারবেন। ডিজাইন প্রসেসের সময় নিজেকে ভিজিটরের মতন চিন্তা করুন, আপনি অন্য সাইট ভিজিট করলে কোন ব্যাপারগুলোর জন্য আপনি বিরক্ত হোন, প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস ভালো না লাগলেও আপনি কেনেন নাএগুলো আপনি আপনার সাইটের ক্ষেত্রে চিন্তা করুন, যেগুলো আপনাকে বিরক্ত করে, সময় নষ্ট করে সেগুলো বাদ দিন।
৪. সাইটের কালারকে গুরুত্ব দিন
কালারের ব্যাপারটা এতোটাও সহজ করে ফেলবেন না যে নীল রঙ আপনার প্রিয় রঙ তাই চলো সব জায়গায় এই রঙই ব্যবহার করা যাক। রঙ অনেক পাওয়ারফুল একটি টুল আর আপনাকে রঙের সাইকোলোজি জানতে হবে।
বিভিন্ন রঙ বিভিন্ন আবেগকে এবং একসনকে রিপ্রেজেন্ট করে, তাই আপনাকে আপনার ক্রেতা কারা, তাদের আবেগ, অনুভুতি কি রকম এগুলো চিন্তা করে এরপর সে অনুযায়ী রঙ নির্বাচন করতে হবে তাহলে আপনি আপনার কাস্টমারের কাছে বাড়তি একটা সুবিধা পাবেন। যেমন, আপনি যদি সেল চান তাহলে কাস্টোমার যে বাটনে ক্লিক করে প্রোডাক্ট অথবা সার্ভিস কিনবে সেটা অন্য কিছুর থেকে আলাদা করে ফেলুন, হতে পারে লাল রঙ দিয়ে বাটনটি ডিজাইন করা হয়েছে।
কালার সাইকোলোজি অনুযায়ী লাল রঙ উত্তেজনা এবং আবেগ এর অনুভুতি প্রকাশ করে,যা কিনা ব্যায় করার পিছনের কারন হিসেবে দেখা যায়, এবং গবেষণা বলে লাল বাটন আপনার সেল কনভার্শনকে ৩৪% পর্যন্ত বাড়াতে পারে।
অথবা আপনি যদি আপনার বিশ্বাসযোগ্যতা উপরের দিকে নিতে চান তাহলে আপনি নীল রঙ ব্যবহার করতে পারেন, নীল রঙ সব সময় যে ভালোবাসার রঙ হিসেবে ব্যবহার হয় সেটা কিন্তু না, এটা আবেগ, বিশ্বাস কে বাড়াতে সহায়তা করে। এই কারনে দেখবেন বিজনেসের ৫০ ভাগের বেশি লোগোর রঙ নীল হয়ে থাকে।
৫. ভালো মানের ছবি ব্যবহার করুন
ওয়েব ডিজাইনের দুনিয়ায় এটা প্রায় সবাই জানি ছবি সেলস বাড়ায়, কেউই প্রোডাক্ট না দেখে কিছু কিনবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ছবির মান যদি ভালো না হয় তাহলে কাস্টোমার সেটা কিনতে আগ্রহি হবে না, তাদের মধ্যে এরকম একটা বিশ্বাস চলে আসবে যে সাইটে প্রোডাক্টের ছবির মান ভালো না, সেখানে প্রোডাক্টের মান কেমন হবে সেটা তো বুঝাই যায়, তাই বুঝতেই পারছেন আপনার প্রোডাক্ট ভালো হবার পরেও শুধুমাত্র আপনার ছবির মান ভালো না হবার জন্য আপনার সেল হচ্ছে না। তাই ভালো মানের ছবি ব্যবহার করতে হবে আপনাকে। সব প্রোডাক্টের প্রফেশনাল ছবি ব্যবহার করা এবং বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে প্রোডাক্টের ছবি ব্যবহার করা কাস্টোমারের মনে আত্মবিশ্বাসের জন্ম নেয়। আর কাস্টোমার যখন একটা প্রডাক্ট কেনার সময় আত্মবিশ্বাসী থাকে যে সে কি কিনছে তাহলে সেটা কেনার ব্যাপারে ফাইনাল ডিসিশন খুব সহজে হয়ে যায়।
উপসংহার
একটা ই কমার্স ওয়েবসাইট ডিজাইন করা সহজ কোন কাজ না আর এটা এমনও না যে মার্কেটের একটা জনপ্রিয় সাইট ডিজাইনারকে দিয়ে বললেন এরকম হলেই চলবে। তাই নিজের সাইট নিজের মত করে বানানোর চেস্টা করুন যা কিনা নকল নয়, তাহলেই আপনি কাস্টোমারের মন জয় করতে পারবেন।